ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে করলার যত উপকারিতা
করলা স্বাদে তেতো হলেও, এতে থাকে অনেক পুষ্টিগুণ। করলায় থাকে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, জিংকসহ বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন ও খনিজ উপাদান। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে করলার জুস খুবই উপকারী। উপমহাদেশ ও চীনের গ্রামাঞ্চলের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে ডায়াবেটিসের ওষুধ হিসেবে করলার রস পান করে আসছেন।
এছাড়া বাত রোগে, লিভার ও শরীরের কোনো অংশ ফুলে গেলে তা থেকে পরিত্রাণ পেতে করলা ভালো পথ্য। নিয়মিত করলা খেলে জ্বর, হাম ও বসন্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে যায়।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে করলা জুসের উপকারিতা
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ম্যাজিকের মত কাজ করে করলা। এতে এমন উপাদান আছে, যা ইনসুলিনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন করলা খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এক গবেষণায় করলার অ্যান্টিডায়াবেটিক বৈশিষ্ট্য প্রমাণ করে। এটি গ্লুকোজ বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে একটি হাইপোগ্লাইসেমিক প্রভাব প্রয়োগ করে। [1]
করলার শাঁস, বীজ এবং সম্পূর্ণ উদ্ভিদের নির্যাসে একটি হাইপোগ্লাইসেমিক প্রভাব রয়েছে। করলার মধ্যে উপস্থিত স্যাপোনিন, অ্যালকালয়েড এবং পলিফেনলগুলি ইনসুলিন সহনশীলতা এবং গ্লুকোজ গ্রহণ বৃদ্ধির জন্য দায়ী। [2]
এছাড়াও করলায় কয়েকটি সক্রিয় পদার্থ আছে। তাদের মধ্যে একটি হলো চারেন্টিন। এটি রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখে। করলায় আরও আছে পলিপেপটাইড-পি বা পি-ইনসুলিন নামক একটি যৌগ। যা প্রাকৃতিকভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
করলা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কারণ এটি রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে পারে। ইনসুলিনের নিঃসরণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে করলা।
এছাড়াও করলায় কয়েকটি সক্রিয় পদার্থ আছে। তাদের মধ্যে একটি হলো চারেন্টিন। এটি রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে রাখে। করলায় আরও আছে পলিপেপটাইড-পি বা পি-ইনসুলিন নামক একটি যৌগ। যা প্রাকৃতিকভাবে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
করলা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। কারণ এটি রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে পারে। ইনসুলিনের নিঃসরণ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে করলা।
করলা কিভাবে রক্তে চিনির মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে?
করলা ইনসুলিন রেজিস্টেন্স কমিয়ে রক্ত থেকে শরীরের কোষগুলোর সুগার গ্রহণ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। তা ছাড়া করলা শরীরের কোষের ভেতর গ্লুকোজের বিপাক ক্রিয়াও বাড়িয়ে দেয়। ফলে রক্তের সুগার কমে যায়।
বিজ্ঞানীরা মোট তিনটি উপাদান পেয়েছেন যাদের হাইপোগ্লাইসেমিক ক্রিয়া আছে – এই তিনটি উপাদান হলো – চারেন্টিন, ভিসিন, পলিপেপটাইড-পি। এদের মধ্যে চারেন্টিন এর খুব ভালো গ্লাইসেমিক প্রভাব আছে। এছাড়া করলাতে লেকটিন নামে একটি উপাদান পাওয়া যায় যা রক্তের গ্লুকোজের ঘনত্ব কমিয়ে দেয় |
করলা এবং করলা থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন উপাদানসমুহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে আমাদের রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এটি যেসব পদ্ধতিতে আমাদের রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা কমায় সেগুলি হল-
- এটি পেরিফেরাল এবং স্কেলেটাল পেশিতে গ্লুকোজের ব্যবহার বৃদ্ধি করে।
- ক্ষুদ্রান্ত্রে গ্লুকোজের গ্রহণ কমায়।
- গ্লুকোনিওজিক হরমোনের উৎপাদন ও ক্রিয়াকৌশলে বাধা প্রদান করে।
- আইলেটস অব লেঙ্গারহেন্স এর বিটা সেলকে সংরক্ষণ করতে সাহায্য করে।
গবেষণা হতে দেখা যায় যে, করলার রস তাৎক্ষণিকভাবে ৩০ মিনিটের মধ্যে রক্তে শর্করার মাত্রা কমায় এবং ১২০ মিনিটে উল্লেখযোগ্যভাবে কমায়।
অর্থাৎ করলা ইনসুলিন রেজিস্টেন্স কমিয়ে রক্ত থেকে শরীরের কোষগুলোর সুগার গ্রহণ করার ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। তা ছাড়া করলা শরীরের কোষের ভেতর গ্লুকোজের বিপাক ক্রিয়াও বাড়িয়ে দেয়। ফলে রক্তের সুগার কমে যায়।
শরীরে করলার অন্যান্য উপকারিতা
ডায়াবেটিস কমাতে সাহায্য করে
করলা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য পথ্য হিসাবে বিবেচিত হয়। যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের বেশি পরিমাণে তেতো খাওয়া উচিত। করলা/উচ্ছের রস এবং এই গাছের পাতা নিয়মিত সেবন করলে তা রক্তে চিনির মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে।
১। হজমের জন্য ভাল– খাবার হজম করতে সহায়ক এবং হজম শক্তি বর্ধক এই সব্জি। তবে শুধু হজম শক্তিই নয়, করলা ফাইবারে পূর্ণ হওয়ায় এটি কোষ্ঠকাঠিন্যর মতো সমস্যা থেকেও মুক্তি দেয়।
২। হার্ট ভালো রাখে- এর তিক্ত রস এলডিএল অর্থাৎ খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায় এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি হ্রাস করে।
৩। প্রস্টেট ক্যান্সার- করলা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং অ্যালার্জি ও যে কোন রোগের সংক্রমণ রোধ করে। এটি ক্যান্সার কোষের বিস্তার রোধ করে। নিয়মিত করলা খেলে স্তন ক্যান্সার, কোলন ক্যান্সার এবং প্রস্টেট ক্যান্সারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।
৪। ওজন নিয়ন্ত্রণ- ক্যালরি ও ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় করলা ওজন হ্রাসে সহায়তা করে। এটি অ্যাডিপোজ কোষ যা দেহে ফ্যাট সংরক্ষণ করে, তার গঠন এবং বৃদ্ধি বন্ধ করে। এটি পরিপাক ক্রিয়া উন্নতি করে এবং অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টগুলি শরীরকে ডিটক্সাইয়েটে সহায়তা করে যাতে চর্বি হ্রাস করতে পারে।
৫। ক্ষত নিরাময়ে করলা- করলার দুর্দান্ত একটি বৈশিষ্ট্য এটি। কোন স্থানে ক্ষত হলে করলার ব্যবহার তৎক্ষণাৎ ওই স্থানের রক্ত প্রবাহ এবং রক্ত জমাট বাঁধা নিয়ন্ত্রণ করে, যার ফলে ক্ষতের দ্রুত নিরাময় হয়।
৬। রক্ত পরিশোধক– করলাতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এটি রক্ত সঞ্চালন উন্নত করতে সহায়তা করে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৭। দেহে শক্তি জোগায়- নিয়মিত করলা সেবনে দেহে শক্তির মাত্রা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।
৮। চোখের সমস্যা- করলা ভিটামিন এ সমৃদ্ধ, এটি ছানি প্রতিরোধ করে এবং দৃষ্টি শক্তিশালী করে।
৯। শক্তিবর্ধক- করলার রস শক্তিবর্ধক হিসেবেও কাজ করে। এটি স্ট্যামিনা বাড়ানোর পাশাপাশি ভালো ঘুমে সহায়তা করে।
এছাড়াও এটি অনিদ্রার মতো সমস্যা হ্রাস করে। ডায়রিয়া ও পেটের অন্যান্য সমস্যাও কমাতে সহায়ক এই সব্জি। আমাদের দেহের ইমিউন সিস্টেমকে বাড়িয়ে তুলে শরীরকে রোগে সংক্রামিত হওয়ার থেকে সুরক্ষা প্রদান করে করলা।
- যদিও এটি বেশিরভাগ মানুষের পক্ষে নিরাপদ, তবে এটি গর্ভবতী মহিলাদের খাওয়া উচিত নয় কারণ এর বীজ এবং রস প্রাণী গর্ভপাত ঘটানোর কারণ হিসেবে পরিচিত।
- বুকের দুধ খাওয়ানো মহিলাদের করলা খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। এর বিষাক্ত পদার্থের একটি সংখ্যা তাদের শিশুর ক্ষতি করতে পারে।
- করলা খাওয়ার কারণে যে সমস্ত মানুষের গ্লুকোজ ৬ ফসফেট ডিহাইড্রোজিনেস এনজাইম ঘাটতির জন্য ‘ফেবিজম’ (লোহিত কণিকা ভেঙ্গে যায়, হিমোলিটিক রক্তাল্পতা ঘটায়) নামক অবস্থার বৃদ্ধি হতে পারে এবং তাদেরও এটি এড়িয়ে চলা উচিত।
- রস হিসাবে, যদি এটি বেশি পরিমাণে খাওয়া হয় তবে এটি পেট ব্যথা, ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে।
ডায়াবেটিক রোগীরা করলা কিভাবে খাবেন?
- ডায়াবেটিক রোগীরা বিভিন্নভাবে খেতে পারেন এই সবজি যেমন- করলার তরকারি কিংবা ভাজি করে।
- ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে করলার পাতাঃ এটিতে করলার মতই এন্টি ডায়াবেটিক উপাদান থাকে। পাশাপাশি এতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ও গ্লাইসেমিক লোড কম থাকে। ডায়াবেটিক রোগীর খাদ্য তালিকায় করলার পাতা রাখলে করলা থেকেও বেশি উপকার পাওয়া যাবে। এই করলা পাতা বিভিন্ন ভাবে খাওয়া যেতে পারে। যেমন- করলা পাতা ভেজে বা ঝোল করে খেতে পারে, করলা পাতার রস করেও খেতে পারে।
- আর যদি একেবারেই করলা খেতে না পারেন, তাহলে তা শুকিয়ে নিন। তারপর কেটে মিহি করে গুঁড়া তৈরি করুন। সকালে খালি পেটে পানিতে এই গুঁড়া মিশিয়ে পান করুন। তবে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে করলার রস খাওয়া বেশি উপকারী। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে আধা কাপ করলার রস ডায়াবেটিস নিযন্ত্রণসহ শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করবে।
- সুগার নিয়ন্ত্রণে করলা চা খাওয়া যেতে পারে। করলা স্লাইস করে কেটে শুকিয়ে রেখে অথবা করলা পাতাও শুকিয়ে রেখে পানিতে ফুটিয়ে করলা চা তৈরি করা যেতে পারে।
- এছাড়াও ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে করলা জুস খাওয়া যেতে পারে।
শুধু করলার জুস খেয়ে কি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব?
ঔষধ, শরীরচর্চা আর নিয়ম মেনে খাওয়া-দাওয়া করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে বটে, কিন্তু তা কোনভাবেই পুরোপুরি নিরাময় করা সম্ভব নয়। তাই যদি কেউ ভেবে থাকেন যে কোন রকমের নিয়ম না মেনে শুধুমাত্র করলার জুস খেয়ে ডায়াবেটিস নিযন্ত্রণ করা যাবে তবে তা একেবারেই ভুল ধারণা।
একটানা কতদিন করলার জুস খাওয়া যাবে?
তিন মাস টানা খাওয়ার পর ১২-১৫ দিন খাওয়া বন্ধ করতে হবে। বাজারে চলতি যে জুস পাওয়া যায়, সেগুলি না খাওয়াই ভাল। এতে সোডিয়াম বেনজোইট মেশানো থাকে ফলে এগুলির কার্যকারিতা একটু হলেও কম হবে।
অতএব দেখা যাচ্ছে, করলার গুণাগুণ ও উপকারিতা ব্যাপক। করলা শুধু ডায়াবেটিক রোগীদের জন্যই না, সবার জন্য স্বাস্থ্যকর একটি সবজি। এটি শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।