জেনে নিন, প্রতিদিন ১টি করে টমেটো খেলে কি হয়?
টমেটো এমন একটি খাবার যেটা দক্ষিণ আমেরিকার আন্দিজ এলাকায় এক সময় বিষাক্ত মনে করা হতো এবং আজও যাকে আমরা সবজি ভেবে ভুল করি, কারণ আসলে সেটা একটা ফল। তবে জানেন কি প্রতিদিন একটি করে টমেটো খেলে আমাদের শরীরের কি হবে? চলুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক।
টমেটো খাওয়ার উপকারিতা
১। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ
টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্টের কথা আমরা প্রায় সময়ই শুনে থাকি, কিন্তু জানেন এটা কেন এতো গুরুত্বপূর্ণ? আসলে এটা দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে, রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, ধমনী সুরক্ষিত রাখে এবং হার্টকে সুস্থ রাখে। এছাড়াও টমেটোতে লাইকোপেন নামে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে যার কারণেই টমেটো লাল রঙের হয়ে থাকে।
২। দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে
টমেটো আপনার দৃষ্টিশক্তি উন্নত করে। মনে করেন, আপনার শরীরে ভিটামিন এ-এর ঘাটতি দেখা দিয়েছে তাহলে চোখের জন্য এটা মোটেও খুশির সংবাদ নয়। কারণ চোখ তখন সঠিকভাবে আলো সনাক্ত করে আপনার ব্রেনে সিগন্যাল পাঠাতে পারেনা। তবে সুসংবাদ হচ্ছে, টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে।
এছাড়াও এতে ক্যারোটিনয়েডস থাকে যা চোখে ক্ষতিকর আলো ঢুকতে বাঁধা দেয় এবং আপনার চোখের টিস্যুগুলোকে সুরক্ষিত রাখে।
৩। ত্বক উজ্জ্বল করে
উজ্জ্বল ত্বক পেতে টমেটোর কোন বিকল্প নেই। অ্যান্টি-এজিং প্রোডাক্ট কেনার সময় কোলাজেন শব্দের নাম হয়ত সবাই শুনেছেন। এটা এমন একটা প্রোটিন যেটা আপনার ত্বককে কোমল ও প্রাণবন্ত রাখতে সাহায্য করে। তবে এই প্রোটিন একা একা কিছু করতে পারেনা, এর সঠিকভাবে কাজ করতে ভিটামিন সি এর প্রয়োজন হয়। আর ভিটামিন সি আপনার ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি এবং ফ্রি-রেডিকেল থেকে রক্ষা করে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, প্রতিদিন এই ফলটি খেলে তা সানবার্ন, ব্রণ এবং ত্বকের অন্যান্য দাগ দূর করতে সাহায্য করে। আপনি যদি ত্বকের কোলাজেন লেভেল বাড়ানোর জন্য প্রতিদিনের চাহিদা অনুযায়ী ভিটামিন সি খুঁজে থাকেন, তাহলে একটি টমেটো থেকেই তার ৩০% পেয়ে যাবেন!!
৪। রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
আপনি হয়ত জেনে থাকবেন যে, অসুস্থ হলে বেশি বেশি ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খেতে হয়। কিন্তু আপনি যদি প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি খান তাহলে ঘন ঘন অসুস্থ হওয়ার সম্ভবনা কমে যায়। কারণ ভিটামিন সি ব্যাক্টেরিয়া এবং ভাইরাল ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াই করে এবং আপনার রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এতে মনে হয় আপনার একটু অসুবিধা হয়ে যাবে, কারণ আপনি তখন আর ঘন ঘন স্কুল কিংবা অফিস কামায় দিতে পারবেন না!! তবে যাই হোক, এটা সত্য যে আপনি সবসময় তরতাজা ও চনমনে থাকবেন!
৫। শক্তি বৃদ্ধি করে
টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে ফলিক এসিড থাকে যেটা আসলে এক প্রকার ভিটামিন বি যা অবসাদ দূর করতে ওস্তাদ! যার ফলে আপনার এনার্জি লেভেল বেড়ে যাবে এবং আপনি সারাদিন অ্যাক্টিভ থাকতে পারবেন। শুধু এই নয়, গবেষকরা এটা প্রমাণ করেছে যে, যারা নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমাণে টমেটো খায় তাদের রক্তে ফলিক এসিডের মাত্রা বেশি থাকে যা তাদেরকে ডিপ্রেশন থেকে দূরে রাখে।
৬। চুল সুন্দর রাখে
টমেটো আপনার চুল সুন্দর রাখতে সাহায্য করবে। বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি এটা আপনাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন কে সরবরাহ করে থাকে। এটা মনে করা হয় যে, চুলের জন্য টমেটো ম্যাজিকের মত কাজ করে। কারণ এটা আসলে চুলকে গোঁড়া থেকে মজবুত করে এবং দ্রুত লম্বা হতে সাহায্য করে।
৭। হাড় মজবুত করে
টমেটোতে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং ক্যালসিয়াম থাকে যা হাড়কে মজবুত ও শক্তিশালী করে। এতে থাকা লাইকোপেন, অস্টেওপোরেসিস প্রতিরোধ করে যেটা একটা মারাত্মক রোগ। কারণ এই রোগে আক্রান্ত হলে হাড়ে ছিদ্র হওয়া ও হাড় ভেঙ্গে যাওয়ার আশংকা থাকে।
৮। স্ট্রোকের সম্ভবনা কমায়
মেডিটেরানিয়ান ডায়েট যারা ফলো করেন তাদের মধ্যে হার্টের রোগ হওয়ার সম্ভবনা অনেক কম থাকে। কারণ এই ডায়েটে টমেটো এবং অলিভ অয়েলের পরিমাণ বেশি থাকে। টমেটো জুসে থাকা পুষ্টি উপাদান রক্ত জমাট বাঁধতে দেয়না। এছাড়াও হার্ভার্ডের এক গবেষণায় জানা গেছে যে, যারা বেশি বেশি টমেটো খান তাদের স্ট্রোকের সম্ভবনা অনেক কম থাকে।
৯। ওজন কমাতে সাহায্য করে
টমেটো ওজন কমাতে সাহায্য করে। যদি আপনি ওজন কমানোর কথা চিন্তা করে টমেটো নাও খেয়ে থাকেন তবুও আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এটা থাকলে আপনার ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এতে অনেক কম পরিমাণে ক্যালরি থাকায় তা শরীরে ফ্যাট জমতে দেয়না। এছাড়া এটা টাইপ-২ ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্যও অনেক উপকারী।
১০। মস্তিকের শক্তি বাড়ায়
টমেটোতে এমন কিছু পুষ্টি উপাদান থাকে যা মস্তিককে শক্তিশালী করে তোলে। তাই আপনি যদি প্রায়শই ভুলে যাওয়ার সমস্যাই ভুগে থাকেন এবং কোন কাজে ঠিকভাবে মনোযোগ দিতে না পারেন তাহলে আপনার জন্য প্রতিদিন টমেটো খাওয়া বাধ্যতামূলক!
আশা করি পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য পেতে আমাদের ফেজবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।