সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে না পারার কারণ!
সারারাত ভালভাবে ঘুম হওয়া সত্ত্বেও কি আপনি কি সকালে ক্রমাগত অ্যালার্মের স্নুজ বাটন চেপেই যাচ্ছেন? আপনি যদি সকালের পাখি হওয়ার থেকে রাত জাগা পেঁচা হয়ে যান তাহলে রাত জেগে করা ঐ কাজগুলোই আপনাকে সকালে উঠতে বাধা দিবে।
তবে যদি এরকম না হয়, তাহলে হয়ত অন্য কোন কারণ রয়েছে যার কারণে আপনি সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠতে পারছেন না। চলুন তবে জেনে নেওয়া যাক কি সেই কারণ গুলো।
এক অনানুষ্ঠানিক তালিকা থেকে উঠে এসেছে যে, ৯০% সফল ব্যক্তিরায় সকাল সকাল ঘুম থেকে ওঠেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন জ্যাক ডরসি (টুইটারের সি ই ও), যিনি ভোর ৫ টায় ঘুম থেকে ওঠেন।
টিম কুক (অ্যাপেলের সি ই ও), যিনি ঘুম থেকে ওঠেন ভোর ৩:৪৫ এ। এবং ইন্দ্রা নোয়ি (পেপ্সিকোর সি ই ও), যিনি ভোর ৪ টায় ঘুম থেকে ওঠেন। এর কারণ হচ্ছে দ্রুত ঘুম থেকে উঠলে তারা ব্যায়াম করার জন্য যথেষ্ট সময় পান, সংবাদ গুলো একবার দেখে নিতে পারেন এবং স্বাস্থ্যকর ব্রেকফাস্ট খেতে পারেন।
এছাড়াও সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠলে তা মানুষের শরীরের জন্য আরও অনেক উপকার বয়ে আনে। তবে আপনি আসলে সকাল সকাল কেন উঠতে পারছেন না জানেন?
জীনগত বৈশিষ্ট্যের কারণে
২০১৬ সালে টুয়েন্টি থ্রি এন্ড মি থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয় যে, জীনগত বৈশিষ্ট্য অনেক সময় ঠিক করে দেয় যে কে রাত জাগা পেঁচার মত হবে আর কে সকাল বেলার পাখি হবে। এটাতে আরও বলা হয় যে, যারা সকালে ওঠা পছন্দ করে, তাদের সাতটি জীন সার্কাডিয়ান রিদিমের সাথে যুক্ত রয়েছে যেটা তাদের পছন্দকে নিয়ন্ত্রণ করে।
সার্কাডিয়ান রিদিম মূলত আমাদের দেহের অভ্যন্তরীণ ঘড়ি যেটা বলে দেয় কখন ঘুম থেকে উঠতে হবে এবং কখন ঘুমাতে যেতে হবে। তাই জীনগত কারণের জন্য আপনি হয়ত রাত জাগতে পছন্দ করেন না হয় সকাল সকাল উঠতে পছন্দ করেন।
এই গবেষণায় আরও দেখা যায় যে, ৮৯% অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ৫৬% মানুষ তাদের নিশাচর হিসাবে দাবি করেছেন এবং বাকিদের মধ্য থেকে দেখা গেছে মহিলারা এবং ষাটোর্ধ মানুষেরা সকালে উঠতে বেশি পছন্দ করেন। তাই যদি আপনি শত চেষ্টা করেও ঘুম থেকে উঠতে না পারেন তাহলে সেই দোষ নির্দিধায় আপনার বাবা-মার উপরে চাপিয়ে দিয়ে পারেন। তবে সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে নিজে নিজে আপনার অভ্যন্তরীণ ঘড়ির সময়ও বদলে ফেলতে পারেন।
ডিপ্রেশনে থাকার কারণে
যদি আপনার দেরি করে ঘুম থেকে ওঠার জন্য জীনগত কারণ দায়ী না থাকে তাহলে হয়ত ডিপ্রেশন একটা কারণ হতে পারে। তবে আপনার মনে হতে পারে, “না, আমিতো ডিপ্রেসড নই! আমিতো অনেক হাসিখুশিই আছি।” তবে এই ডিপ্রেশন সেটা নয় যেটা আপনি কল্পনা করছেন। এই ধরণের ডিপ্রেশনে থাকা মানুষগুলোর থেকে থেকে মন খারাপ হয় তবে এরা আনন্দপূর্ণ কোন পরিবেশের মধ্যে থাকলে এদের মুখে সবসময় হাসি থাকে।
এমনকি এই সমস্যায় ভোগা লোকেরা হয়ত জানেইনা যে তারা ডিপ্রেসেড। এর দুইটি প্রধান লক্ষণ হচ্ছে বেশি বেশি খাওয়া এবং ঘুমানো। যদি আপনি প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টার বেশি ঘুমিয়েও সারাদিন ঘুম ঘুম অনুভব করেন তাহলে হয়ত আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের উপর একটু নজর দেওয়া উচিত। আর এর জন্য ভালো কোন ডাক্তার বা থেরাপিস্টের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।
শরীরে আয়রনের ঘাটতি
আপনি যদি স্বাস্থ্যকর খাবার খান, নিয়মিত ব্যায়াম করেন, নিজেকে চাঙ্গা রাখার জন্য কফি খান এবং তারপরেও প্রতিদিন সকালের দিকে ক্লান্তি অনুভব করেন তাহলে এটা বলা যায় যে আপনার শরীরে আয়রনের ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এর ফলেই আপনি সকালে ঘুম ঘুম অনুভব করেন এবং এর রেশ প্রায় সারাদিনই থেকে যায়। এর ফলে রক্তস্বল্পতাও দেখা দেয়। যারা সবুজ শাকসবজি ও লাল মাংস খায়না তাদের ক্ষেত্রে রক্তসল্পতার ঝুঁকি বেশি থাকে। তাই এই সমস্যা সমাধানে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার অথবা নিউট্রশনিস্টের সাথে পরামর্শ করতে পারেন।
ঘুমের কোয়ালিটি নষ্ট হলে
তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে ওঠার সাথে আরও দুইটি বিষয়ের যোগসূত্র রয়েছে- একটি হল ঘুমের কোয়ালিটি এবং অন্যটি হল কত দেরি করে আপনি বিছানায় যাচ্ছেন। প্রতিদিন যে ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেটগুলো ব্যবহার করছেন সেটা অনেকাংশে আপনার ঘুমের কোয়ালিটি নষ্ট করার জন্য দায়ী।
যদি ঘুমানোর একদম পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত আপনার ফোন ব্যবহার করতে থাকেন তাহলে এটাই যথেষ্ট আপনার সকালে দেরি করে ওঠার জন্য। আপনার সার্কাডিয়ান রিদিম দুইটি তরল পদার্থ নিঃসরণের সাথে যুক্ত রয়েছে- মেলাটোনিন এবং সেরোটোনিন। মেলাটোনিন এর উৎপাদন শুরু হয় যখন চারিদিকে পুরোপুরি অন্ধকার হয়ে যায়। তবে আশেপাশে পুরো অন্ধকার থাকলেও দুর্ভাগ্যবশত আপনার ফোন থেকে যে ব্লু লাইট নিঃসরণ হয়, তা আপনার ব্রেইনকে সংকেত দেয় যে এখন দিনের বেলা।
তাই যদি আপনি ঘুমানোর ঠিক পূর্ব মুহূর্তে ফোনে ফেসবুক চালান অথবা মেইলগুলো চেক করতে থাকেন তাহলে এটা নিশ্চিত যে আপনার রাতের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে চলেছে। এটা আপনার শরীরের মেলাটোনিন এর উৎপাদন কমিয়ে দিবে যার ফলে আপনি সকালে ঘুম থেকে উঠতে পারবেন না।
আবহাওয়ার কারণে
সকালে ঘুম থেকে তাড়াতাড়ি উঠতে না পারার আর একটা কারণ হতে পারে আবহাওয়া। দেখা যায় যে, গরমের দিনে আপনি না চাইতেই সকাল সকাল আপনার ঘুম ভেঙ্গে যাচ্ছে সূর্যের আলো ছড়ানোর সাথে সাথেই। কিন্তু শীতকালে ঐ প্রিয় কম্বল ছেড়ে কে-ই বা উঠতে চায়! এটা শুধু তাপমাত্রার কারণে নয় বরং সূর্য দেরি করে ওঠার কারণে।
শীতকালের দিন ছোট এবং রাত বড় হয়। আর আগেই জেনেছেন যে আমাদের অভ্যন্তরীণ ঘড়ি সূর্য ওঠার সাথে সাথেই সংকেত দিতে থাকে যে এখন ঘুম থেকে ওঠার সময়। কিন্তু শীতকালে সূর্য যখন দেরি করে আলো ছড়ায় তখন আমাদের ব্রেইনও ভাবতে থাকে তাহলে এখনও হয়ত সকাল হয়নি।
তাই শীতকালে যেহেতু আমাদের দেহ পর্যাপ্ত সূর্যের আলো পায়না, তাই যথারীতি শরীরের সেরোটোনিন লেভেল ও কমে যায়। যার ফলে আপনার এনার্জি কমে যায় এবং আপনার মুড ভালো থাকেনা। তবে যদি আপনি নিয়মিত সকালে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস তৈরি করে ফেলেন তাহলে শীতকালেও আপনি সময় মতই উঠতে পারবেন কারণ আপনার অভ্যন্তরীণ ঘড়ি নিয়মের সাথে মানিয়ে যাবে।
তাই আজ থেকেই ঘুমের সময় বদলে ফেলুন এবং ঘুমানোর সময় ফোন এবং অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক গ্যাজেট দূরে রাখুন।
আশা করি পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য পেতে আমাদের ফেজবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।