বাসমতী চালের ভাত কতটা স্বাস্থ্যকর?
সাউথ ইন্ডিয়ান খাবারের মধ্যে বাসমতী চালের ভাত খুবই জনপ্রিয়। বিশেষ করে ইন্ডিয়ায় এটি বেশি জনপ্রিয়। সাদা এবং বাদামী এই দুই ধরনের বাসমতী চাল হয়ে থাকে যেটা এর বাদাম ফ্লেভার এবং ভিন্ন স্বাদের জন্য বেশি প্রিয়।
তবে আপনি কি জানেন অন্যান্য চালের তুলনায় এই বাসমতী চালের ভাত আসলে কতটুকু স্বাস্থ্যকর? তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক এটা আসলে কতটা স্বাস্থ্যকর এবং এর পুষ্টি উপাদান সম্পর্কে।
বাসমতী চালের পুষ্টি উপাদান
বাসমতী চালের আসল পুষ্টিগুণ চালের উপর নির্ভর করে ভিন্ন ভিন্ন হতে পারে। তবে প্রতি প্লেটে উচ্চ মাত্রার ক্যালরি এবং কার্বোহাইড্রেটের সাথে কিছু মাইক্রোনিউট্রিইয়েন্টস যেমন- ফোলেট, থায়ামিন এবং সেলেনিয়াম থাকে।
এক কাপ (১৬৩ গ্রাম) রান্না করা বাসমতী চালে থাকেঃ
ক্যালরি | ২১০ |
প্রোটিন | ৪.৪ গ্রাম |
ফ্যাট | ০.৫ গ্রাম |
কার্বোহাইড্রেট | ৪৫.৬ গ্রাম |
ফাইবার | ০.৭ গ্রাম |
সোডিয়াম | ৩৯৯ মিলিগ্রাম |
ফোলেট | দৈনিক আহারের ২৪% |
থায়ামিন | দৈনিক আহারের ২২% |
সেলেনিয়াম | দৈনিক আহারের ২২% |
নিয়াসিন | দৈনিক আহারের ১৫% |
কপার | দৈনিক আহারের ১২% |
আয়রন | দৈনিক আহারের ১১% |
ভিটামিন বি৬ | দৈনিক আহারের ৯% |
জিঙ্ক | দৈনিক আহারের ৭% |
ফসফরাস | দৈনিক আহারের ৬% |
ম্যাগনেসিয়াম | দৈনিক আহারের ৫% |
বাসমতী চালের উপকারিতা
উচ্চ মাত্রার কার্বোহাইড্রেট এবং ক্যালরি থাকা সত্ত্বেও বাসমতী চালের কিছু উপকারিতাও রয়েছে। চলুন জেনে নেওয়া যাক কি সেগুলোঃ
আর্সেনিকের মাত্রা কম
আর্সেনিক একটি ভারী ধাতু যেটা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর এবং বেশি মাত্রায় গ্রহণের ফলে তা হার্টের রোগ, ডায়াবেটিস, এমনকি ক্যান্সারের ঝুঁকিও বেড়ে যায়। আর অন্যান্য চালের তুলনায় বাসমতী চালে আর্সেনিকের মাত্রা কম থাকে।
আর এইসব রোগের ঝুঁকি তাদের বেশি থাকে যারা নিয়মিত অন্যান্য চালের ভাত খায়। ক্যালিফোর্নিয়া, ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তানের বাসমতী চালের উপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে যে, এইসব দেশের বাসমতী চালে আর্সেনিকের মাত্রা অন্যান্য চালের তুলনায় অনেক কম থাকে।
বলে রাখা জরুরি যে, লাল চালে আর্সেনিকের মাত্রা সাদা চালের তুলনায় বেশি থাকে।
পুষ্টিতে সমৃদ্ধ
সাদা বাসমতী চাল প্রায়সময়ই পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ হয় কারণ প্রসেসিং এর সময় এতে প্রয়োজনীয় কিছু উপাদান যোগ করা হয় যাতে করে তা পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি করতে পারে। এতে করে বাসমতী চাল আপানার নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় কিছু ভিটামিন এবং মিনারেলের চাহিদা পূরণ করতে পারে।
এছাড়াও এতে পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়রন, ভিটামিন বি, ফলিক এসিড, থায়ামিন এবং নিয়াসিন থাকে যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
কিছু খারাপ দিক
সাদা বাসমতী চাল পরিশোধিত শস্যদানা। যার ফলে এতে থাকা কিছু গুরুত্বপুর্ন উপাদান প্রসেসিং এর সময় বাদ পড়ে যায়। অন্যদিকে ব্রাউন বা লাল বাসমতী চালে সেগুলো অক্ষুন্ন থাকে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, বেশি পরিমাণে পরিশোধিত শস্য কণা খেলে তা রক্তের গ্লুকোজের মাত্রায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
এছাড়াও ২৬০০০ মানুষের (যারা নিয়মিত সাদা চাউলের ভাত খায়) উপর গবেষণা চালিয়ে দেখা গিয়েছে যে, তারা উচ্চ মেটাবলিক সিন্ড্রোমে আক্রান্ত যার অর্থ হল, তাদের হৃদরোগ, স্ট্রোক এবং টাইপ-২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি অত্যধিক মাত্রায় বেশি।
এর প্রধান কারণ লাল চালের তুলনায় সাদা চালে থাকা উচ্চ মাত্রার কার্বোহাইড্রেট এবং কম পরিমাণ ফাইবার। তাই সাদা বাসমতী চালের থেকে ব্রাউন বাসমতী চালের ভাত খাওয়া শ্রেয়।
শেষ কথা
সর্বপরি বাসমতী চাল হচ্ছে সুগন্ধযুক্ত লম্বাটে শস্যদানা যাতে আর্সেনিকের মাত্রা কম এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং মিনারেলও উপস্থিত থাকে। এটা সাদা এবং লাল দুই প্রকারের হয়ে থাকে। তবে যতদূর সম্ভব ব্রাউন বাসমতী চাল খাওয়া উচিত কারণ সাদা বাসমতী চাল পরিশোধিত হওয়ায় তাতে পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ণ থাকেনা, যা শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আর নিয়মিত বাসমতী চালের ভাত না খাওয়ায় শ্রেয়।
আপনারা মেইন ডিস হিসাবে কি খান অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।