Uncategorized

যে ১০টি খাদ্য আপনার বাচ্চার জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর!

আপনার হয়ত অফিসের জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছে এদিকে আপনার বাচ্চাদেরও হয়ত তাদের স্কুলের জন্য দেরি হয়ে যাচ্ছে। এমতবস্থায় আপনাকে বাধ্য হয়ে তাড়াতাড়ি কিছু একটা তৈরি করতে হয় সকালের নাস্তার জন্য। আর আপনি হয়ত দুধ এবং সিরিয়াল মিশিয়ে আপনার বাচ্চাকে খেতে দিলেন। কি, এই ব্যপারটা নিশ্চয় খুব পরিচিত লাগছে তাইনা? 

তবে আপনি কি চান যে ছোটবেলা থেকেই আপনার বাচ্চাদের মধ্যে এমন কিছু অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস গড়ে উঠুক যেটা তারা বড় হয়েও বজায় রাখবে? কিন্তু বাস্তবিক অর্থে ব্যপারটা খুবই কঠিন হয়ে দাড়ায় যখন মা-বাবা দুইজনই বাইরে কাজ করে থাকেন। তবে ছোটবেলা থেকেই বাচ্চাদের জানানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে কোন খাবারগুলো আসলে তাদের স্বাস্থ্যের জন্য ভালো এবং কোনগুলো ক্ষতিকর। 

তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক কোন খাবারগুলো আপনার বাচ্চাদের জন্য ক্ষতিকর এবং সেগুলোর পুষ্টিকর বিকল্প কি হতে পারে।

বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর খাদ্য তালিকা

১। জুস 

প্রথমে আসি জুসের কথায়। এই ফলের রসের পানীয়টা অধিকাংশ বাচ্চাদের প্রিয়। তবে জুস বানানোর সময় যে পরিমাণ চিনি এতে মেশানো হয় তা তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের রক্তে মিশে যায় যা কার্বোহাইড্রেট্রের মেটাবোলিজমের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। তাই আমেরিকান একাডেমি অব পিডিয়াট্রিক্স জুসের বদলে বাচ্চাদের শুধু ফল খাওয়ানোর পরামর্শ দিয়ে থাকেন। তবে চিনি এবং পানি ছাড়া ফলের জুস করে খাওয়াতে পারেন এবং বাজার থেকে জুস কিনে খাওয়ানোর কথা তো ভুলেই যান! 

২। দই 

আমরা সবাই জানি দই স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কিন্তু বাচ্চাদের দই খাওয়ানোর আগে দইয়ের গায়ে জড়ানো লেবেল টা পড়ুন এবং দেখুন যে এটা আসলে কি কি উপকরণ দিয়ে বানানো। আর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে কখনোই ফ্রিজে রাখা দই ব্যাতিত খোলা সেলফ-এ রাখা দই কিনবেন না কারণ সেটা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সবসময় চেষ্টা করবেন চিনি ছাড়া প্রাকৃতিক দই কিনে খাওয়ানোর যেটা অবশ্য বাজারে পাওয়া মুশকিল। তাই সবথেকে ভালো হয় যদি আপনি বাড়ি দই বানিয়ে খাওয়ান। কারণ চিনিযুক্ত দই খেলে বাচ্চাদের ওজন বেড়ে যাবে এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকিও বাড়িয়ে দিবে। 

৩। কর্ণফ্লেক্স এবং সিরিয়াল

কর্ণফ্লেক্স এবং যেকোনো ধরণের সিরিয়াল বিজ্ঞাপনে দেখতে খুব ভালো লাগে এবং খুবই স্বাস্থ্যকর মনে হয়। আর বিজ্ঞাপনদাতা সবসময় দাবি করে থাকেন যে এগুলো অনেক পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এগুলো বিন্দু পরিমাণেও ভিটামিন ও মিনারেলস তো বহন করেই না বরং চিনিতে ভরপুর। প্রোডাকশনের সময় ভুট্টা, গম ও ওটসের সব গুণাগুণ নষ্ট হয়ে যায় এবং শুধু কার্বোহাইড্রেট অক্ষত থাকে। যার ফলে এটা কোনভাবেই বাচ্চাদের ক্ষুধা মেটাতে পারেনা এবং এক বাটি কর্ণফ্লেক্স খাওয়ার কিছুক্ষণ পরে আবার ক্ষুধা পেয়ে যায়। তাই এর পরিবর্তে ওটমিল খাওয়াতে পারেন এবং স্বাদ বাড়িয়ে তুলতে সাথে কিছু ফল ও বাদামও যোগ করতে পারেন। 

৪। আঙ্গুর

যদিও আঙ্গুর অনেক ধরণের ভিটামিন ও মিনারেলস-এ ভরপুর তবুও বাচ্চাদের আঙ্গুর খেতে দেওয়া ঠিক নয়। কারণ এটা স্লিপারি এবং যেকোনো সময় বাচ্চাদের গলায় আটকে যেতে পারে। আর বাচ্চাদের পাকস্থলীর জন্য আঙ্গুর হজম করা অনেক কঠিন হয়ে যায়। তাই  আঙ্গুরের পরিবর্তে বেশি বেশি কলা খাওয়াতে পারেন। 

৫।  কোক এবং মিল্কশেক

যদি আপনার বাচ্চার জন্য কোক এবং মিল্কশেকের মধ্যে যেকোনো একটি বেছে নিতে বলা হয় তাহলে আপনি কোনটি বেছে নিবেন? নিশ্চয় মিল্কশেক? কিন্তু এই দুইটিই আপনার বাচ্চার জন্য ক্ষতিকর। কারণ এটা প্রচুর পরিমাণে চিনি এবং ফ্যাট বহন করে। আধুনিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, নিয়মিত এরকম ফ্যাটি ড্রিংক খেতে থাকলে হৃদরোগের আশংকা বাড়তে থাকে, যেটা শুধু বাচ্চাদের জন্য নয় বড়দের জন্যও প্রযোজ্য। 

৬। ফাস্টফুড 

বড়দের প্রিয় কিন্তু অস্বাস্থ্যকর খাবার ফাস্টফুড যেমন ফেঞ্ছ ফ্রাই, পিজ্জা এবং বার্গারের সাথে আপনার বাচ্চাকে ভুলেও পরিচয় করাবেন না! এগুলো ঠিক আছে তাদের জন্য, যারা যথেষ্ট পরিশ্রম করে তবে আপনার বাচ্চার জন্য নয়। কারণ এগুলো লবণ, চিনি এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাটে পরিপূর্ণ। আর এগুলো যদি নিয়মিত খেতে থাকা হয় তাহলে স্থুলতাসহ উচ্চ কোলেস্টেরল এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে থাকে। 

৭। কফি 

আর আপনি হয়ত ইতোমধ্যেই জানেন যে বাচ্চাদের জন্য কফি ক্ষতিকর। কিন্তু আপনার মনে প্রশ্নে আসতে পারে যে আসলে কেন ক্ষতিকর? বিশ্বব্যাপী নাম করা স্বাস্থ্য বিষয়ক ম্যাগাজিন হেলথ লাইনের লেখক টবি অ্যামিডর অনেকগুলো কারণের মধ্যে সবচেয়ে উদ্বেগজনক কারণগুলো প্রকাশ করেছেন। কফিতে থাকা ক্যাফেইন বাচ্চাদের শরীরে ক্যালসিয়াম শুষে নিতে বাধা দেয় যেটা বাচ্চাদের হাড়কে দুর্বল করে দেয়। এবং কফিতে অ্যাড করা চিনি স্থূলতা ও ক্যাভিটিসের কারণ হতে পারে। 

৮। প্রোসেসড মিট

প্রোসেসড মিট থেকে বাচ্চাদের দূরে রাখুন যেমন সসেজ, হট ডগ, বেকন ইত্যাদি। কারণ এগুলো সোডিয়াম এবং স্যাচুরেটেড ফ্যাটে পরিপূর্ণ। যখন প্রতি নিয়ত এগুলো খাওয়া হয় এবং অনেক বেশি পরিমাণে, তখন তা হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। তাই প্রোসেসড মিটের পরিবর্তে সাধারণ ভাবে রান্না করা মাংস ব্যবহার করে হট ডগ বানিয়ে খাওয়ান। এতে আপনার বাচ্চার মনও ভরবে আবার স্বাস্থ্যের কোন ক্ষতিও হবেনা। 

৯। চিকেন নাগেট

অধিকাংশ বাচ্চাদেরই চিকেন নাগেট একটি অতি প্রিয় খাবার। কারণ সেগুলো খেতে অনেক সুস্বাদু এবং বিভিন্ন শেপে পাওয়া যায়। কিন্তু এর অতিরঞ্জিত প্যাকেজিং দেখে মোটেই বিভ্রান্ত হবেন না। কারণ এটা প্রিজারভেটিভ, লবণ, ক্যালরি এবং চিনিতে পরিপূর্ণ। এগুলোর পরিবর্তে বাসায় চিকেন নাগেট বানিয়ে ফেলুন অথবা চিকেন ব্রেস্ট খুব ভালভাবে বেক করে খাওয়ান। 

১০। টমেটো কেচাপ 

কেচাপ বাড়িতে আনা বন্ধ করুন। কারণ কেচাপ দিয়ে খাবার খেতে সুস্বাদু লাগলেও এটা শুধু চিনি, কর্ণ সিরাপ, ফুড কালার এবং অতিরিক্ত ফ্যাট বহন করে। তাই টমেটো দিয়ে বাড়িতেই বানিয়ে ফেলুন মজাদার কেচাপ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Back to top button