Uncategorized

চায়নার মানুষ কেন সবসময় গরম পানি খায়

কল্পনা করুন জুলাইয়ের মাঝামাঝি কোন এক সময়ে আপনি চায়নাতে গিয়েছেন। গরমে সিদ্ধ হয়ে যাওয়ার মত আবহাওয়া আর তখন একটি জিনিসই শুধু আপনার মাথায় আসবে, তা হচ্ছে বরফের মত ঠাণ্ডা এক গ্লাস পানি! কাছাকাছি কোন এক দোকানে গিয়ে আপনি এক গ্লাস পানি চাইলেন এবং দোকানি আপনাকে এতো গরম পানি খেতে দিল যে আপনার জিহ্বা পুড়ে গেল! জি হ্যা, চায়নাতে শীত হোক বা গ্রীষ্মকাল, সবসময়ই গরম পানি খাওয়া হয়। চায়নার সংস্কৃতি ও ইতিহাস ঘাঁটলেই এই রহস্যের সমাধান পাওয়া যায়।

চাইনিজদের গরম পানি খাওয়ার ইতিহাস

সবসময় মনে রাখবেন, কখনোই অতিরিক্ত গরম পানি খাবেন না কারণ তা মুখের ভেতরের কোষ ও লালাগ্রন্থির ক্ষতি করতে পারে। তাই সবসময় কুসুম গরম পানি খাওয়ার অভ্যাস করুন। চলুন এখন জেনে নেওয়া যাক চাইনিজরা আসলে কেন সবসময় গরম পানি খায়।  

চায়নার ঐতিহ্যগত চিকিৎসাশাস্ত্র বিশ্বাস করে যে, মানুষের দেহ- ইন এবং ইয়াং নামে দুইটি উপাদান দ্বারা গঠিত। এবং আপনি তখনই সুস্থ থাকবেন যখন আপনার ইন এবং ইয়াং এর মধ্যে সামঞ্জস্যতা থাকবে। ধরে নেওয়া যাক আপনার ইয়াং খুব শক্তিশালী হয়ে গেল, সেক্ষেত্রে আপনার দেহের অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যাবে এবং আপনি অসুস্থ হয়ে পড়বেন।

তাই এই অতিরিক্ত ইয়াং বা অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা থেকে মুক্তি পাওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এটা থেকে মুক্তি পাওয়ার সহজ উপায় হচ্ছে গরম জাতীয় পানীয় খাওয়া। এই পানীয়গুলো ইন গোত্রীয় হওয়াই তা ইয়াংকে অতিরিক্ত শক্তিশালী হতে বাধা দেয় এবং শরীরে সামঞ্জস্যতা বজায় থাকে।

চায়নার লোকেরা খ্রিস্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দী থেকে এই পদ্ধতি অবলম্বন করে আসছে। কিন্তু সেই আমলে সবার পক্ষে তেলখড়ি পুড়িয়ে পানি গরম করে খাওয়ার সাধ্য ছিলনা। তাই গরম পানি খাওয়া তখন সংরক্ষণ করে রাখা হত শুধুমাত্র বয়স্ক, অসুস্থ ও গর্ভবতী মহিলাদের জন্য। খাওয়ার মাঝে গরম পানি খাওয়ার আরও একটা কারণ হচ্ছে তা হজম শক্তিকে বৃদ্ধি করে।

গরম পানি খাওয়ার কিছু উপকারিতা

চাইনিজদের গরম পানি খাওয়ার ইতিহাস জানার আগে চলুন জেনে নেওয়া যাক গরম পানি খাওয়ার কিছু উপকারিতা সম্পর্কে। 

১। কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

আপনি কি দীর্ঘদিন ধরে কোষ্ঠকাঠিন্যে ভুগছেন? তাহলে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এক গ্লাস কুসুম গরম পানি খাওয়া শুরু করে দিন। এতে করে পেট সহজেই পরিষ্কার হয়ে যাবে। এবং কিছুদিনের মধ্যেই দেখবেন কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে।

২। ওজন নিয়ন্ত্রণ করে

ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে গরম পানি। তবে অন্য কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে শুধু গরম পানি পান করলে কোনভাবেই ওজন কমবে না। তাই পরিপূর্ণ ডায়েট ও ব্যায়ামের পাশাপাশি নিয়মিত গরম পানি পান করলে তা ওজন কমাতে সাহায্য করবে।

এক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে কুসুম গরম পানি এবং লেবুর রস মিশিয়ে পান করলে শরীর অল্প অল্প করে সারাদিন ক্যালোরি পোড়াতে থাকে। এতে করে ওজন কমার পাশাপাশি পেট ফাঁপার সমস্যাও দূর হয়। 

৩। রক্ত চলাচল ঠিক থাকে

ঠাণ্ডা পানি পান করলে পেশী টানটান হয়ে আসে, অন্যদিকে গরম পানি পান করলে পেশীতে রক্ত চলাচল বাড়ে এবং পেশী শিথিল হয়।  জয়েন্টের ব্যথা থেকে শুরু করে পিরিয়ডের ক্র্যাম্প, সব ধরণের ব্যথা কমাতে কাজে আসে গরম পানি। এছাড়া ঘুমাতে যাবার আগে গরম পানি পান করলে শরীর ঝরঝরে এবং ব্যথামুক্ত থাকে।

৪। ঘুমের সমস্যা সমাধান করে

এ যুগের ছেলেমেয়েদের মধ্যে রাতে ভালো ঘুম না হওয়ার সমস্যাটা অনেক বেশি। তবে নিয়মিত গরম পানি পান করলে এই রোগ থেকে মুক্তি মিলবে। গরম পানি পান করলে দেহের তাপমত্রা বেড়ে যায়। ফলে শরীর ও স্নায়ু শান্ত থাকে যা আপনাকে একটি সুনিদ্রা দিতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটা মধ্যরাতে ঘুম ভাঙ্গার প্রবণতা কমিয়ে ফেলে।

তাহলে এখন বলুন তো প্রতিদিন আপনি আসলে কতটুকু পানি পান করেন? আর গরম পানি বেশি খান নাকি ঠাণ্ডা পানি? অবশ্যই কমেন্ট করে জানান। 

আশা করি পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য পেতে আমাদের ফেজবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Back to top button