Foods

সৌন্দর্য চর্চায় অ্যালোভেরার ভূমিকা

প্রায় প্রতিদিনই বাইরে যেতে হয় নানা প্রয়োজনে। কিন্তু বাইরে বেরুলেই ধূলা-বালিতে ত্বকের অবস্থা শোচনীয় হয়ে যায়। ব্যস্ততার কারণে হয়তো পার্লারে গিয়ে ত্বকের যত্ন নেওয়ার সুযোগও হয়না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ত্বকের যত্নে সবচেয়ে ভাল প্রাকৃতিক উপাদানের মধ্যে অ্যালোভেরা খুবই উপকারী।

আমাদের দেশে ঘৃতকুমারী নামেও এটি পরিচিত। আর ত্বককে সুন্দর রাখতে অ্যালোভেরার মতো প্রাকৃতিক উপাদান বেশি ব্যবহার করা উচিত কারণ প্রাকৃতিক উপাদানের কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই।

তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরার ভূমিকা কি এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে অ্যালোভেরা কীভাবে ব্যবহার করবেন সে সম্পর্কে। 

প্রাকৃতিক স্ক্রাব

স্ক্রাব হিসেবে অ্যালোভেরা ব্যবহার করতে পারেন। বিশেষ করে শুষ্ক ত্বকের জন্য এটি খুবই কার্যকর। অ্যালোভেরার সঙ্গে দুধ, মসুর ডালের গুঁড়া, তুলসী পাতা, চন্দন ও গোলাপ পাপড়ি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। মিশ্রণটি দিয়ে ঘষে ঘষে ত্বক পরিষ্কার করুন। এতে করে মরা কোষ উঠে স্নিগ্ধ হবে ত্বক। তাই সপ্তাহে অন্তত ২ বার এই প্যাক ব্যবহার করুন। 

বলিরেখা দূর করে 

ত্বকের বলিরেখা দূর করার জন্য অ্যালোভেরার রস খুবই উপকারী। এজন্য শুকনো কমলালেবুর খোসার গুঁড়ো, চালের গুঁড়ো, মধু ও তুলসী পাতার মিশ্রণের সঙ্গে অ্যালোভেরা মিশিয়ে প্যাক তৈরি করুন। এই মিশ্রণটি ত্বকে লাগিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ। এরপর শুকিয়ে গেলে ঠাণ্ডা পানির ঝাপটায় ধুয়ে ফেলুন। এভাবে নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের বলিরেখা দূর হবে এবং অল্প বয়সে বুড়িয়ে যাওয়া প্রতিরোধ হবে। 

প্রাকৃতিক নাইট ক্রিম

রাতে ক্ষতিকর নাইট ক্রিমের বদলে অ্যালোভেরা জেল লাগান। দেখবেন স্কিন গ্লো করছে মাত্র এক সপ্তাহে। যদি অ্যালোভেরা গাছের থেকে জেল নিয়ে মাখতে পারেন তাহলে সবচেয়ে ভালো ফল পাবেন।

কিন্তু অ্যালোভেরা গাছ না থাকলে, পতঞ্জলির অ্যালোভেরা জেলও ব্যবহার করতে পারেন। রাতে ঘুমোতে যাবার আগে ভালো করে মুখ ধুয়ে পুরো মুখে ভালোভাবে অ্যালোভেরার জেল লাগান। সকালে ঠাণ্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। তবে ভালো ফলাফলের জন্য এটি সপ্তাহে সাত দিনই ব্যবহার করতে হবে। নিয়মিত ব্যবহার করতে বাড়িতেই লাগাতে পারেন অ্যালোভেরা গাছ। এতে প্রতিদিন তাজা পাতা পাওয়া যাবে।

সানবার্ন দূর করে

সানবার্ন থেকে রেহাই পেতে অ্যালোভেরার চেয়ে ভালো কোন সমাধান হতেই পারেনা। তাই ত্বকের রোদে পোড়া ভাব দূর করতে হোমমেড অ্যালোভেরার লোশন ব্যবহার করতে পারেন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি অ্যালোভেরা জেল সরাসরি ত্বকে লাগাতে পারেন তাহলে। নিয়মিত ব্যবহারে নিমিষেই রোদে পোড়ার তামাটে রঙ দূর হয়ে যাবে।

ব্রণের যম

অ্যালোভেরার প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান ব্রণ সারাতে আর নুতন কোষ জন্মাতে খুবই কার্যকর। অ্যালোভেরার জেল আইস কিউব ট্রেতে করে অ্যালোভেরার আইস কিউব তৈরি করে এই কিউব দিনে দু তিনবার ব্রণ আক্রান্ত স্থানে ঘষলে ব্রণের সমস্যার সমাধান হবে।

ক্ষত সারাতে ওস্তাদ

অ্যালোভেরার অ্যান্টিসেপটিক গুনাগুনও উল্লেখযোগ্য। অ্যালোভেরার পাতার জেল বের ফ্রিজে রাখুন আর অল্প কেটে গেলে বা ক্ষত হলে সাথে সাথে ফ্রিজ থেকে কিউব বের করে লাগান। দিনে দুই বা তিন বার লাগালেই ক্ষত দ্রুত সেরে উঠবে।

চুলের যত্নে অ্যালোভেরা

ত্বকের পাশাপাশি চুলের জন্য অ্যালোভেরা অনেক দরকারি। অ্যালোভেরা ব্যবহারে মাথার ত্বকের পি এইচ ঠিক থাকে আর খুশকিও দূর হয়। ২ঃ১ অনুপাতে  অ্যালোভেরা জেল আর ক্যাস্টর অয়েল মিশিয়ে মাথার ত্বকে লাগিয়ে সারা রাত রেখে সকালে শ্যাম্পু করতে হবে। এতে করে চুল খুশকি মুক্ত থাকবে।

ঠোঁটের রঙ উজ্জ্বল করে

ঠোঁটের রঙ উজ্জ্বল রাখতে, ঠোঁট নরম আর মসৃণ করতে অ্যালোভেরা ব্যবহার করা যায়। নিয়মিত অ্যালোভেরা জেল ঠোঁটে লাগালেই ঠোঁট উজ্জ্বল হবে। এক টেবিল চামচ চালের গুঁড়া আর অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে আস্তে আস্তে এই মিশ্রণ ঠোঁটে ঘষে লাগিয়ে ৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। এরকমভাবে কিছুদিন করলে দেখতেই পারবেন ঠোঁট কত উজ্জ্বল, মসৃণ এবং কোমল হয়ে ওঠে।

ত্বকের ইনফেকশন দূর করে

পোকামাকড়ের কামড় অথবা ইনফেকশন দূর করতে পারে অ্যালোভেরা। এজন্য অ্যালোভেরা জেল আক্রান্ত স্থানে কিছুক্ষণ ঘষে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। 

ত্বক উজ্জ্বল করে 

নিয়মিত অ্যালোভেরার জুস পান করলে ত্বক থাকে স্বাস্থ্যোজ্জ্বল। এছাড়া অ্যালোভেরা জেল সরাসরি ত্বকে লাগালেও ত্বক হবে উজ্জ্বল ও সুন্দর। 

ত্বকের লালচে ভাব দূর করে 

ত্বকের লালচে ভাব দূর করতে ময়েশ্চারাইজার অথবা ক্রিমের সঙ্গে অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে নিয়মিত ব্যবহার করুন। এতে করে ত্বকের লালচে ভাব দূর হয়ে ত্বক হবে প্রানবন্ত।

শুষ্ক ত্বকের যত্নে

রুক্ষ ও প্রানহীন ত্বকের যত্নে অ্যালোভেরা অনন্য। ত্বকে প্রতিদিন অ্যালোভেরা জেল ম্যাসাজ করুন। ত্বকের পিএইচ লেভেল নিয়ন্ত্রণ করে ত্বক সুস্থ রাখবে এটি। অ্যালোভেরার রস মুখে লাগিয়ে শুকিয়ে গেলে এভাবেই ঘুমিয়ে পড়তে পারেন।

সারারাত অ্যালোভেরার রস ত্বকের নানা সমস্যা দূর করতে ভূমিকা রাখবে। তবে তুলো বা সুতি কাপড় ছাড়া অন্যকিছু দিয়ে ত্বকে অ্যালোভেরা লাগানো ঠিক নয়। তাতে অ্যালার্জী হওয়ার ঝুকি তৈরি হয়। শুধু মুখের জন্য নয়, পুরো শরীরে ব্যবহার করা যায় অ্যালোভেরা।

এক্ষেত্রে সাবধানতা হলো, অ্যালোভেরার রস ত্বকে লাগিয়ে রোদে যাওয়া যাবে না। তাতে উল্টো ত্বকের ক্ষতি হতে পারে।

আশা করি পোস্টটি আপনাদের ভালো লেগেছে। স্বাস্থ্য সম্পর্কিত যেকোনো তথ্য পেতে আমাদের ফেজবুক পেজে লাইক দিয়ে সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

Back to top button